প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চীনে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গত ডিসেম্বরে দেয়া পূর্বাভাসের চেয়ে বিশ্বে চালের উৎপাদন কমবে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তবে, চীনে কমলেও বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে চাল উৎপাদন বাড়বে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
এফএওর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে চালের উৎপাদনের এখনকার পূর্বাভাস ৫১ কোটি ২০ লাখ টন ধরা হচ্ছে, যা ডিসেম্বরের পূর্বাভাসের চেয়ে ১২ লাখ টন কম। কারণ হিসেবে গত ডিসেম্বরে চীনের কর্মকর্তাদের মূল্যায়ন পর্যালোচনা তুলে ধরে বলা হয়েছে, এফএও যে প্রাক্বলন করেছিল তার চেয়ে দেশটির বিভিন্ন এলাকায় ধান রোপণ হয়েছে কম। এর মধ্যে চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ফসলি এলাকাও রয়েছে। তারও আগে দেশটির দক্ষিণে তাপদাহ ও শুষ্কতার কারণে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
চীনের চাল উৎপাদনের সংশোধিত হিসাব নিম্নমুখী হলেও কয়েকটি দেশের চাল উৎপাদন সংশোধিত হিসাবে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। রোপণের সময় বৃষ্টিপাত সংক্রান্ত জটিলতার পরও এসব দেশে মৌসুমের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ শস্যের উৎপাদন নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে বলে জানাচ্ছে জাতিসংঘের এই সংস্থাটি।
এ ছাড়াও এফএওর দেয়া সবশেষ হিসাবে, ২০২২ সালে বিশ্বে খাদ্য শস্য উৎপাদন ৮৩ লাখ টন বেড়ে ২৭৬ কোটি ৫০ লাখ টন হবে বলে পূর্বাভাস মিলেছে। তবে, পূর্বাভাস বাড়লেও এটা গত আগের বছরের চেয়ে ১ দশমিক ৭ শতাংশ কম।
অস্ট্রেলিয়া ও রুশ ফেডারেশনের দেশগুলোতে গত বছরের প্রত্যাশার চেয়ে বাড়তি উৎপাদনের প্রাক্কলনের পর গমের সরবরাহ বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বাজারের গমের দাম আরও কমেছে। অন্যদিকে, মোটা খাদ্য শস্যের দাম কিছুটা চড়া আছে। মূলত ব্রাজিলের ভুট্টার চাহিদা ভালো থাকায় দামে প্রভাব পড়েছে।
সরবরাহ সংকট, এশীয় কয়েকটি রফতানিকারক দেশে জোরালো চাহিদা এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের ওঠানামার ফলে জানুয়ারিতে চালের আন্তর্জাতিক দাম ঊর্ধ্বগতিতেই ছিল।
জাতিসংঘের এ সংস্থাটি আরও বলছে, দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই একমাত্র ব্যতিক্রম, যেখানে অন্যান্য দেশের চেয়ে জানুয়ারিতে চালের দাম কমেছে। এক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারিতে কৃষকের ঘরে উঠতে যাওয়া বোরো ধানের ভালো ফলনের আভাস রয়েছে বলে মনে করছে এফএও। তবে, বাংলাদেশে চালের দাম কমলেও তা আগের বছরের চেয়ে কিছুটা বেশিই আছে।
এদিকে, বাংলাদেশে গমের আটার দাম জানুয়ারিতে কমলেও তা আগের বছরের চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি। আমদানিতে শ্লথগতি ও বর্ধমান পরিবহন ব্যয়ের কারণেই এমন পরিস্থিতি হয়েছে বলে এফএও বলছে।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর ও এ বছরের জানুয়ারিতে স্থানীয়ভাবে প্রধান খাদ্যশস্যের দাম উচ্চ পর্যায়েই ছিল। যদিও তা আফ্রিকার দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের কিছু অংশসহ বাছাই করা কয়েকটি দেশে ২০২২ সালের শীর্ষ পর্যায় থেকে কিছুটা কমেছে।
Leave a Reply