রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতা প্রার্থী হতে যাচ্ছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে অনেকে ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
অনুসারীদের নিয়ে তারা পাড়া-মহল্লা চষে বেড়াচ্ছেন। তাদের সঙ্গে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরাও রয়েছেন। তবে সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা স্থানীয় সিনিয়র নেতাদের এড়িয়ে চলছেন। এমনকি নেতাদের ফোনও তারা ধরছেন না।
রাজশাহী বিএনপির এক শীর্ষ নেতা জানান, আসন্ন নির্বাচন থেকে দলের নেতাদের বিরত রাখা যাচ্ছে না। বিষয়টি বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জানানো হয়েছে। লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান যেকোনো উপায়ে সিটি নির্বাচন থেকে দলের নেতাদের বিরত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির নেতাদের তিনি এ নির্দেশ দিয়েছেন। সম্ভাব্য নেতাদের প্রয়োজনে দলের বিভিন্ন শাখায় নতুন পদ দেওয়ার কৌশল নিতে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বিকালে দলের নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রাজশাহী মহানগর বিএনপি নেতাদের জরুরিভাবে তলব করেন তারেক রহমান।
সেখানে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ইশা, সদস্যসচিব মামুন অর রশিদ, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুশ তালুকদার দুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন প্রমুখ হাজির হন।
ভিডিওকলে তারেক রহমান তাদের সঙ্গে ৪৫ মিনিট কথা বলেন। নেতাদের সতর্ক করে তিনি বলেন, এ সরকারের অধীনে কোনো পর্যায়ের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না-এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। সুতরাং মেয়র বা কাউন্সিলর পদে যাতে কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মী অংশ না নেন; সে পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে না পারলে মহানগর নেতাদের এর দায় নিতে হবে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনেরও তাগিদ দেন তিনি।
দলীয় সূত্র জানায়, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করার সময় রাজশাহী মহানগর বিএনপি ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ পরস্পরের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করেন। মহানগর বিএনপির এক নেতা অভিযোগ করেন- সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই মিজানুর রহমান মিনুর অনুসারী। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে মিনু আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন।
মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নির্বাচন করছেন। ইতোমধ্যে অনেকে মনোনয়নপত্র উত্তোলন শেষে ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন। পাশাপাশি সংরক্ষিত ১০টি আসনেও মহিলা দলের নেত্রীদের অনেকে মনোনয়নপত্র তুলেছেন।
কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারী বিএনপি নেতাদের মধ্যে রয়েছেন-১৬নং ওয়ার্ডে শাহমখদুম থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বেলাল হোসেন, ১৯নং ওয়ার্ডে মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুজ্জামান টিটো, ১৪নং ওয়ার্ডে ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক টুটুল, ১৫নং ওয়ার্ডে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আব্দুস সোবহান লিটন, ১২নং ওয়ার্ডে বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সহ-সভাপতি দিলদার হোসেন, ১১নং ওয়ার্ডে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি কিনু, ১৩নং ওয়ার্ডে বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম মিলু, ১৮নং ওয়ার্ডে ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি জিল্লুর রহমান।
এছাড়া, সংরক্ষিত ১৩, ১৪ ও ১৫নং ওয়ার্ডে মহানগর মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক সামসুন নাহার এবং সংরক্ষিত ৬, ৭ ও ৮নং ওয়ার্ডে মহানগর মহিলা দলের সভানেত্রী বেলি খাতুন ভোট করছেন।
দলের শীর্ষ নেতৃত্বের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও কেন ভোট করছেন-জানতে চাইলে মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুজ্জামান টিটো বলেন, সিটি নির্বাচন না করলে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের ধরে রাখা কঠিন। মূলত দলের স্বার্থেই তারা ভোটে অংশ নিচ্ছেন। দল সাংগঠনিকভাবে লাভবান হবে।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কঠোর হুঁশিয়ারি বাস্তবায়নে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন-জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ আলী ইশা শনিবার বলেন, আমরা যাকে পাচ্ছি তাকেই ভোট থেকে সরে আসতে বলছি। ফোন করে বা ডেকে নিয়ে তাদের বোঝানো হচ্ছে। কিন্তু অনেকেই ফোন ধরছেন না। নির্বাচন থেকে তাদের বিরত রাখতে আমরা নানাভাবে চেষ্টা করছি। তিনি আরও বলেন, যারা ভোটে নেমেছেন তাদের অনেকেরই বিএনপিতে এখন আর পদ-পদবি নেই।
আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠেয় রাজশাহী সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষদিন ২৩ মে।
Leave a Reply