1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : editor :
  3. [email protected] : moshiur :
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২২ পূর্বাহ্ন

বর্ষায় সিলেটে যা দেখে এলাম

মোহনা জাহ্নবী
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ৪৬১ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

পাহাড় আর জলবেষ্টিত যেকোনো জায়গা সবচেয়ে বেশি সুন্দর হয়ে ওঠে বর্ষা মৌসুমে। তাই এ মৌসুমে এসব অঞ্চলে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যায় বহুগুণ। সিলেটে যেমন পাহাড় রয়েছে, তেমনই রয়েছে ঝর্ণা ও জলবেষ্টিত আকর্ষণীয় বিভিন্ন জায়গাও। তাই আমরা কয়েকজন মিলে সিদ্ধান্ত নিই, বর্ষায়ই ঘুরতে যাবো সেখানে। তবে একদম ভরা বর্ষায় না গিয়ে বর্ষার শুরু ও শেষের দিকে গেলে ভ্রমণ বেশি নিরাপদ ও উপভোগ্য হয়।

আমরা ঢাকার টিটিপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে রাতের শেষ বাসে উঠেছিলাম। সিলেটে যাতায়াতের জন্য ইউনিক বাস যথেষ্ট আরামদায়ক ও নিরাপদ মনে হয়েছে আমার কাছে। যাত্রাবিরতিতে আমরা নেমেছিলাম রাজমনি হোটেলে। সেখানের গরুর খিচুড়ি বেশ জনপ্রিয়। একবার খেলে সেই স্বাদ বহুকাল লেগে থাকে মুখে। তাই রাজমনি হোটেলে যাত্রাবিরতির সুযোগ পেলে সবাই এটা চেখে দেখার চেষ্টা করবেন।

সিলেটে ঘোরার জন্য একটা গাড়ি রিজার্ভ করে নেয়া সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। আমরা সৌভাগ্যক্রমে একজন ভালো ড্রাইভার পেয়ে গেলাম। তাকে দুদিনের জন্য দশ হাজার টাকায় রিজার্ভ করলাম। যথাসময়ে হোটেলের নিচে গাড়ি এলো। নিচতলাতেই খাবারের হোটেল ছিলো। আমরা ফ্রেস হয়ে সকালের নাস্তা সেরে গাড়িতে উঠে বসলাম।

আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিলো জাফলং। জাফলং যেতে যেতে চারপাশের প্রকৃতি দেখে মুগ্ধ হচ্ছিলাম। জাফলং পৌঁছে চারপাশের ল্যান্ডস্কেপ দেখে আরো মুগ্ধ হলাম। কিন্তু রোদের তীব্রতা একটু কষ্ট দিচ্ছিল। গাড়ি যথাস্থানে পার্কিং করে আমরা হেঁটে হেঁটে জাফলং এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলাম। সেখানেই রয়েছে মায়াবী ঝর্ণা। ভরা মৌসুমে পানি বেশি থাকলে নৌকায় করেই ঝর্ণায় যাওয়া যায়, কিন্তু আমরা বর্ষার শেষের দিকে গিয়েছিলাম বলে পায়ে হেঁটে যেতে হয়েছিল। ঝর্ণায় তখন তুলনামূলক পানি কম ছিল। তবে তা গোসলের জন্য উপযোগী ছিলো বেশ। ঝর্ণার কাছেই কাপড় বদলানোর জন্য জায়গা রয়েছে। দশ টাকার বিনিময়ে কাপড় বদলানো যায়। ঝর্ণায় গোসল শেষে জাফলং এ একটা নৌকায় উঠলাম আমরা, আশপাশটা ঘুরে দেখবো বলে। কিন্তু সেখানে নৌকাভাড়া আকাশচুম্বি। আবার সিলেট এমন একটা জায়গা, যেখানে অনেক দর্শনীয় স্থানই নৌকায় ঘুরে দেখতে হয়। সিলেটে নৌকা ব্যবসাটা পুরোপুরি সিন্ডিকেটের। তাই সতর্ক থাকা শ্রেয়। শুধুমাত্র নৌকায় ঘোরার জন্যেই সিলেট ভ্রমণের খরচ পড়ে যায় অনেকবেশি। আমরা খুব অল্প সময় ঘুরেছি ছোট একটা নৌকা নিয়ে, অল্প একটু জায়গা, তবুও ছয়শ টাকা দিতে হয়েছে তাদের।

জাফলং ভ্রমণ শেষে জাফলং থেকেই দুপুরের খাবার খেয়ে আমরা দেখতে গেলাম তামাবিল বর্ডার আর জৈন্তাপুর হিল রিসোর্ট। বলে রাখা ভালো যে, জাফলং এর হোটেলগুলোর খাবারের মান তেমন ভালো নয়, অন্যত্র খাওয়াই উত্তম। তামাবিল বর্ডারটা পাহাড়ি এলাকার ভেতর ছোট্ট ছিমছাম একটা বর্ডার। বর্ডারের ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্য। আর জৈন্তাপুর হিল রিসোর্টটা খুবই অসাধারণ একটা জায়গা। সেখানে পর্যটকদের জন্য আবাসিক হোটেল আছে। সামনে সবুজ মাঠ, মেঘালয়ের বড় বড় পাহাড় সারি, নান্দনিক ঝর্ণাধারা। সবমিলিয়ে এত অপূর্ব যে, মনে হবে মিনি সুইজারল্যান্ডে চলে এসেছি। সেখানে ঢুকতে কোনো প্রবেশমূল্য নেই। সেখান থেকে আমরা গেলাম জৈন্তাপুর রাজবাড়ি। রাজবাড়ির তেমন কিছু এখন আর অবশিষ্ট নেই। আমাদের হাতেও সময় কম ছিলো। তাই আমরা সেখানে কালক্ষেপন না করে চলে গেলাম লালাখালের উদ্দেশ্যে।

লালাখাল যাওয়ার পথটা তুলনামূলক একটু দুর্গম, তাই সেখানে গেলে সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসার চেষ্টা করা উচিত। আমরা যখন পৌঁছলাম, তখন শেষ বিকেল। একটা নৌকা ঠিক করলাম আধা ঘণ্টার জন্য, ছয়শ টাকা। নৌকা একটু চলার পরেই আমরা সবাই লালাখালের সৌন্দর্য দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। সারাদিনের রৌদ্রতাপের ক্লান্তি মুছে গেল এক নিমিষেই, পুরো দেহ যেন শীতল হয়ে গেলো। সিলেটে গেলে লালাখাল দেখা অবশ্যই উচিত বলে আমি মনে করি। সেখানে চা বাগানও রয়েছে। আমরা নৌকা থামিয়ে চা বাগানও ঘুরে দেখলাম। তখন সন্ধ্যা নামছে। আদিবাসীরা কেউ গোসল করছে সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর, কেউ থালাবাসন মাজছে, কেউ আবার ঘরে ফিরছে। সব মিলিয়ে এক মায়া মায়া অনুভূতি। লালাখালে ঘোরা শেষে সেখানেই আমরা সন্ধ্যার নাস্তা সেরে নিলাম। ততোক্ষণে চারপাশে গাঢ় অন্ধকার নেমেছে। আমরা গাড়িতে চড়ে বসলাম। গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে ভাঙাচোড়া পথ পারি দিয়ে এগোতে থাকলাম সিলেট সদরের উদ্দেশ্যে।

পরদিন সকালে আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিলো ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর। যাত্রাপথে স্টেডিয়াম ও বিমানবন্দর এলাকার লাক্বাতুরা ও মালনীছড়া চা বাগান দেখলাম। সুন্দর মসৃণ পিচঢালা আঁকাবাঁকা রাস্তা, তার দুপাশে চা বাগান, এত অপূর্ব সুন্দর। সাদাপাথর যাওয়ার পথে পথে যেন সৌন্দর্য আঁচল মেলে বসে আছে। সাদাপাথর পৌঁছে প্রথমে আমাদের একটা নৌকা নিতে হলো। এক নৌকায় আটজনের বেশি চড়া যায় না। আমরা নয়জন ছিলাম বলে অনুরোধ করে তাদের রাজি করিয়েছিলাম। নৌকা সাদাপাথরের মূল গন্তব্যে পৌঁছে দেয়, ঘণ্টা দুয়েক পর আবার নিয়ে আসে। খুব বেশি দূরত্ব নয়। তবে এই যাতায়াতটুকুর জন্য আটশ টাকা নৌকাভাড়া নির্ধারিত। নৌকায় যাতায়াতের পথ যেন আরো বেশি সুন্দর। আমরা নৌকা থেকে নেমে প্রথমে চারপাশটা ঘুরে দেখলাম। তারপর সবাই গোসলে নেমে পড়লাম। পাহাড়ি ঝর্ণার স্রোত বেয়ে ছোট একটা নদীর মতো বয়ে চলে সেখানে। তার ওপারেই মেঘালয়। খুবই সুন্দর জায়গা। আর সেখানে গেলে গোসল করতে হবে অবশ্যই, নাহলে দারুণ একটা অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হতে হবে। সেখানেও টাকার বিনিময়ে পোশাক বদলানোর জায়গা রয়েছে। আর গোসলের জন্য টায়ার ভাড়া করে নেয়া যায়। লম্বা সিরিয়াল থাকার কারণে আমরা জামাকাপড় বদলাতে পারলাম না। ফের নৌকায় চড়ে বসলাম। নৌকা থেকে নেমে এক বাড়িতে টাকার বিনিময়ে পোশাক বদলানোর সুযোগ হলো। তারপর সেখানেই আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম।

আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ছিলো রাতারগুল। রাতারগুল একটা জলাবন। বলা বাহুল্য যে, বেশ সুন্দর একটা জায়গা। আমরা দুটো নৌকা নিলাম পনেরশ টাকায়। দর কষাকষি করে টাকা কমানো যায়। তবে রাতারগুলে আমাদের অভিজ্ঞতা ভালো ছিল না। দুজন নৌকার মাঝিই খুব খারাপ ছিল। জলাবনের ভেতর নিয়ে আমাদের ভয় দেখাচ্ছিল, মেয়ে সদস্যদের কেন্দ্র করে নোংরা কথা বলছিল। আমরা খুব অনিরাপদ অনুভব করছিলাম। তাই রাতারগুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারিনি। কোনোমতে ঘাটে ফিরে আসার পর ঘাট মালিকদের কাছে অভিযোগ জানালাম। তারা দুজন মাঝিকে আমাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ালেন আর বললেন, আগামীকাল তোমাদের দুজনের নৌকা চালানো বন্ধ, এটাই তোমাদের শাস্তি। পরবর্তীতে আমরা জেনেছি, রাতারগুলে নাকি এমন খারাপ অভিজ্ঞতা আরো অনেকের সাথেই হয়েছে। আসলে ঘাট মালিকদের এসব নিয়ে তেমন কোনো মাথাব্যথাও নেই। তাই রাতারগুলে ঘুরতে গেলে মাঝি নির্বাচনে সতর্ক থাকতে হবে, বিশেষ করে যদি সাথে মেয়ে সদস্য থাকে।

রাতারগুল থেকে আমরা যখন সদরে ফিরলাম, তখন সন্ধ্যা নেমে গেছে পুরোপুরি। সদর থেকে বিশ মিনিটের দূরত্বে শাহ পরাণ এর মাজার। আমরা সেই মাজার পরিদর্শন করে সদরে অবস্থিত বইয়ের রাজ্য বাতিঘরে গেলাম। সেখানে অনেকেই আমাদের সাথে দেখা করলো। এরপর গেলাম বিখ্যাত ক্বীন ব্রিজে। ক্বীন ব্রিজের নিচে বসে সবাই গান আর গল্পের আসর জমালাম। এরপর রাতের খাবার খেয়ে নিলাম একটা হোটেলে। রাতের খাবার শেষে ঢাকা ফেরার বাস ধরলাম কদমতলি হুমায়ুন চত্বর থেকে। পেছনে ফেলে এলাম অসম্ভব সুন্দর দু’টি দিনের স্মৃতি।

সিলেটের আরো দর্শনীয় স্থানের নাম-
-ডিবির হাওড় (সিলেট তামাবিল মহাসড়ক)
-খাসিয়া পল্লী (জাফলং)
-মণিপুর জাদুঘর (সুবিদ বাজার, সিলেট সদর)
-মণিপুরী রাজবাড়ি (সিলেট সদর, মির্জা জাঙ্গাল)
-হাকালুকি হাওড় ((সিলেট-মৌলভীবাজার এর সীমানায়, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা)
-উৎমাছড়া  (কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা, উত্তর রনিখাই ইউনিয়ন)
-লোভাছড়া (কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ ইউনিয়ন)
-শ্রী চৈতন্য দেবের বাড়ি (গোলাপগঞ্জ উপজেলা)
-হাছন রাজার বাড়ি (বিশ্বনাথ উপজেলা)
-পান্থুমাই (জাফলং এর পান্থুমাই গ্রাম সীমান্ত)
-খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান (তামাবিল-জাফলং রোড)
-লক্ষণছড়া (পান্থুমাই ঝর্ণার কাছে)
-বিছানাকান্দি (গোয়াইনঘাট উপজেলা)
-কুলুমছড়া (গোয়াইনঘাট উপজেলা, কুলুমছড়া গ্রাম)
-জুগিরকান্দি মায়াবন (গোয়াইনঘাট উপজেলা)।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: সিসা হোস্ট