আসন্ন ঈদুল ফিতরের ছুটিকে কেন্দ্র করে ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে বেড়েছে ঘরমুখো নৌযাত্রীর সংখ্যা। সেই সঙ্গে প্রাণ ফিরেছে টার্মিনালে। ঈদযাত্রায় টার্মিনালের সেই চিরচেনা রূপ দেখে আশায় বুক বাঁধছেন লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা।
টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস পার করে ঘরে ফিরতে সদরঘাটে উপস্থিতি বেড়েছে দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের। নিয়মিতভাবে চলাচলকারী লঞ্চগুলো পূর্ণ যাত্রী নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে। কয়দিন আগেও যেখানে যাত্রীর অভাবে নির্দিষ্ট সময়ে লঞ্চ ছাড়তো না, সেখানে ঈদ উপলক্ষ্যে যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় লঞ্চগুলো ভরে ঘাট ছাড়ছে। লঞ্চগুলোর কেবিন খালি নেই ডেকেও দেখা গেছে যাত্রীদের ভিড়।
এদিকে, ঈদযাত্রা উপলক্ষ্যে পুরোনো লঞ্চগুলোকে নতুন করে প্রস্তুত করা হয়েছে। লঞ্চের ফিটনেস দেখে নেয়ার পাশাপাশি সাজসজ্জাও করা হয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনা মোকাবিলায় হালনাগাদ করা হয়েছে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতিও। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবার পর্যাপ্ত বয়া আর লাইফ জ্যাকেটসহ প্রস্তুত করা হয়েছে নিরাপত্তা সরঞ্জাম। আগুনের দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আলাদাভাবে ডেকে পানি ছিটানোর পাম্প মেশিন বসানো হয়েছে বেশ কয়েকটি লঞ্চে।
বরিশালগামী লঞ্চগুলোর ভাড়া স্বাভাবিক থাকলেও ভোলাগামী লঞ্চগুলোর ভাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি বলে জানান যাত্রীরা। ভোলাগামী যাত্রী সোহাগ জানান, ভোলা ইলিশা রুটের লঞ্চ রাজারহাট সি এর চেয়ারের ভাড়া আগে ছিল ৬০০ টাকা এখন নিচ্ছে ৮০০ টাকা। তবে বেশিরভাগ লঞ্চেই ভাড়া স্বাভাবিক থাকায় বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে আছেন যাত্রীরা।
ঢাকা-বরিশাল রুটের এমভি সুরভী-৭ লঞ্চের স্টাফ লতিফুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে আমাদের যাত্রীর সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। ঈদ উপলক্ষ্যে যাত্রী বেশ বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভালোই যাত্রী পাচ্ছি। বেশিরভাগ কেবিনগুলো আগে থেকেই বুকিং দেয়া এজন্য খালি যাচ্ছে না। এছাড়া ডেকেও ভালো লোক হচ্ছে।
ঈদযাত্রায় যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শফিকুর রহমান খান। তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোর মতো এবারও অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। সেইসাথে প্রতিটি পন্টুনে টহল পুলিশ সার্বক্ষণিক টহল দিচ্ছে। আমাদের কন্ট্রোল রুম থেকে সবকিছু মনিটরিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি যাত্রীদের জন্য মেডিকেল টিমও প্রস্তুত রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার লঞ্চে যাত্রী তুলনামূলক কমে গেছে। আগে ঈদের সময় লঞ্চে উঠতে রীতিমতো যে লড়াই করতে হতো সেটা এবার নেই। তাই স্বস্তিতে যেতে পারছেন যাত্রীরা। সকাল থেকেই অনেক যাত্রী এসেছিলেন অগ্রিম টিকিট বুকিং দিতে। কেউ এসেছিলেন পরিবারের সদস্যদের লঞ্চে তুলে দিতে। বিকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যাত্রীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভোলাগামী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভীর বলেন, লঞ্চে আগের মতো ভিড় নেই। যাত্রীও আছে কিন্তু অতিরিক্ত চাপ নেই। অন্য সময়ে কয়েক দিন আগেও টিকিট পাওয়া যেত না। আজ ঘাটে এসেই টিকিট নিতে পেরেছি। তাই আগের মতো ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না।
ঢাকা নদীবন্দরের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক কবির হোসেন বলেন, এখন লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রী সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। আগামীকাল থেকে আরও বাড়বে। আর যাত্রীদের ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আমরা মাইকিং করে সবার সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে, আমাদের স্টাফরাও আছেন। তাদের ইদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে যাতে করে এখানে সব দেখাশোনা করতে পারে। এবার বিভিন্ন রুটে ৪৬টি লঞ্চ চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাত্রীর চাহিদা বাড়লে বিশেষ ট্রিপের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
লঞ্চমালিক সমিতির মহাসচিব শহিদুল হক ভূঁইয়া বলেন, গতকাল থেকে ঈদযাত্রা শুরু হলেও যাত্রীর তেমন চাপ নাই। আগামীকাল পোশাক শ্রমিকদের ছুটি হবে, বোনাস পাবে তখন যাত্রীর কিছুটা চাপ হতে পারে।
প্রসঙ্গত, যান চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু উন্মুক্ত করার পর দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ স্থাপনে একচ্ছত্র ভূমিকা রাখা সদরঘাট টার্মিনালে যাত্রীর ভাটা পড়ে। যাত্রীর অভাবে লঞ্চের সংখ্যাও হ্রাস পেতে শুরু করে। লোকসান থেকে বাঁচতে লঞ্চ মালিকদের নিয়মিত ট্রিপ বন্ধ রাখতেও দেখা যায়।
Leave a Reply