ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। কে না চান, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে? ঈদ আসলে মুখিয়ে থাকেন প্রবাসীরা। সারা বছরের প্ল্যান, ঈদে বাড়ি যাবেন। কার জন্য কি নিয়ে যাবেন, কাকে কি খাওয়াবেন, কোথায় ঘুরতে যাবেন? কত আশা। কিন্তু সে আশা কি সব প্রবাসীর পূরণ হয়? শত শত প্রবাসীর জমানো আশা নিয়ে দিন গুনলেও ঈদের মুখোমুখি সময়ে অসহায়ের মতো প্ল্যান চেঞ্জ করতে হচ্ছে শুধুমাত্র টিকিটের অগ্নিমূল্যের কারণে।
কুয়ালালামপুর-ঢাকা রুটে উড়োজাহাজের ভাড়া নিয়ে শুরু হয়েছে অরাজকতা। চাহিদা বেশি থাকায় সিন্ডিকেট করে ভাড়া কয়েকগুণ বাড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। আর চড়া দামে টিকিট কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের বাংলা মার্কেট (মিনি ঢাকা খ্যাত) কোতারায়া, মসজিদ ইন্ডিয়া, চৌকিট ও তিতিওয়াংসা টিকিট কিনতে আসা কয়েকজন প্রবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা টিকিট কিনতে এসে টিকিট না কিনে ফিরে যাচ্ছেন।
সাইফুল নামের একজন বলেন, এবার ঈদে আর বাড়ি যাওয়া হবে না; টিকিটির যা দাম। ঈদের পরে যাবো ভাই।
এরই মধ্যে সবুজ নামে একজন তার হাতে টিকিট দেখিয়ে বললেন, এই দেখেন, টিকিট কিনলাম ঈদ এবার বাড়ি করব বলে। কিন্তু টিকিটির যা দাম, তাই ঈদের এক সপ্তাহ পরে কিনেছি।
কথা বলতে বলতে এর মধ্যে এরশাদ নামে আরেকজনের ফোনে কল আসতেই কথা বলা শুরু করলেন তার পরিবারের সঙ্গে। হ্যাঁ রুহি বলো, …না এবার ঈদে বাড়ি আসা হবে না। …টিকিটির যা দাম তাই ঈদের পরে আসবো।
আমাদের দেশের জনশক্তি রফতানির চতুর্থ বৃহৎ শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। কোভিডকালীন ও পরবর্তী প্রায় চার বছর বন্ধ থাকার পর দেশটিতে জনশক্তি আমদানি কার্যক্রম শুরু হওয়ায় মালয়েশিয়া ভ্রমণ পিপাসু ও কর্ম তাগিদে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তাছাড়া আনডকুমেন্টেডদের বৈধকরণ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে মালয়েশিয়া সরকার মাত্র ৫০০ রিঙ্গিত জরিমানা দিয়ে দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ এবং বর্তমান কলিং ভিসা চালু থাকায় টুরিস্ট যাত্রীদের চাপ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঢাকা-মালয়েশিয়া রুটের যাত্রী ভাড়া।
এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৯ মাসে এ রুটে উড়োজাহাজের টিকিট ভাড়া বেড়েছে কয়েক গুণ। ফলে টিকিট হয়েছে অনেকটা দুষ্প্রাপ্য এবং অসহায়ের মতো বাড়তি দাম দিয়েই তা কিনতে হচ্ছে যাত্রীদের।
জানা গেছে, ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে বর্তমানে মোট পাঁচটি কোম্পানি সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এগুলোর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা, মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স, এয়ার এশিয়া ও বাতিক (মালিন্দো) এয়ার। এসব এয়ারলাইন্সগুলো সপ্তাহে প্রায় অর্ধশতাধিক ফ্লাইটে এ রুটে যাত্রী পরিবহণ করে থাকে। এছাড়া থাই এয়ারওয়েজ, শ্রীলংকান এয়ারলাইন্স, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, হিমালয়া এয়ারলাইন্স, ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স ও ক্যাথে প্যাসিফিকও বিভিন্ন জায়গায় বিরতি দিয়ে এ রুটে যাত্রী পরিবহণ করে।
সম্প্রতি এ রুটে টিকিটের চাহিদা এতই বেড়েছে যে সেই সুযোগে এয়ার টিকিটিং কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেটভিত্তিক গ্রুপ টিকিট ব্যবসা ও এয়ারলাইন্সগুলো নানা অযুহাতে টিকিটের দাম হয়েছে আগুন।
আকাশপথে যাত্রীসেবা গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমের (জিডিএস) এবং এ রুটের এয়ারলাইন্সগুলোর অনলাইন তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা-কুয়ালালামপুর-ঢাক রুটে ইকোনমি ক্লাসে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ভাড়া দেখানো হয়েছে ৩০৩৭ রিঙ্গিত যা কারেন্সি অনুযায়ী ৭৪ হাজার ৪০৬ টাকা। একই রুটে ৯ এপ্রিল মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের ভাড়া দেখানো হয়েছে ৩০৫৮ রিঙ্গিত যা কারেন্সি অনুযায়ী ৭৪ হাজার ৯২১ টাকা, মালিন্দো একই রুটে ২০ জুলাই মালিন্দো এয়ারের ভাড়া দেখানো হয়েছে ৭২ হাজার ৯৫০ টাকা, ইন্ডিগোর ৪৫ হাজার ৯০০ (চেন্নাইয়ে যাত্রাবিরতি), শ্রীলংকান এয়ারলাইন্সের ৬৪ হাজার ৫৮০ টাকা (কলম্বো হয়ে)।
এখন থেকে ৯ মাস আগেও এ রুটের বিমানের টিকিট মূল্য ছিল হাতের নাগালে। গত বছরের জুন-জুলাইয়ে ২০-২৫ হাজার টাকায় টিকিট বিক্রি করেছে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো।
এখন এ বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে ট্রাভেল এজেন্টরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী কর্মীদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ দেশটিতে পাড়ি জমাচ্ছেন। সেই সুযোগে এয়ারলাইন্সগুলো টিকিটের দাম কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের, মার্কেটিং ম্যানেজার আবরার বলেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের যাতায়াত শুরুর পর থেকেই বিমান ভাড়া বাড়তে শুরু হয়েছে। গত বছরের জুন-জুলাইয়ে আমরা ২০-২৫ হাজারের মধ্যে বিভিন্ন এভিয়েশন কোম্পানির টিকিট বিক্রি করতে পেরেছি। তবে আগস্টের পর ভাড়া বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। এখন মালয়েশিয়ার টিকিট মানেই যেন সোনার হরিণ।
বাংলাদেশি এক্সপ্যাট ইন মালয়েশিয়ার এক্সিকিউটিভ মুশফিকুর রহমান রিয়াজ বলেন, কুয়ালালামপুর ঢাকা রুটে ভাড়া বৃদ্ধি একেবারে অযৌক্তিক। ভাড়া হওয়া উচিত সর্বোচ্চ ২০-২২ হাজার টাকা। ছয় মাস আগেও ২০-২৫ হাজার টাকা ছিল। এখন মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে এয়ারলাইন্সগুলো ডলারের দাম, তেলের দাম বৃদ্ধির কথা বলছে।
কুয়ালালামপুর রুট ছাড়া অন্য কোনো রুটে এত ভাড়া বাড়েনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ রুটে যাত্রীর চাপ অনেক বেশি। কারণ শ্রমিকরা এখন মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বাড়ি যাচ্ছেন পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে। সেই সুযোগে ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
Leave a Reply