উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করা শিক্ষার্থীদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে যারা পাস করতে পারেনি তাদের নতুন উদ্যোমে আগামীতে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বুধবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চামেলী হলে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা পাস করেছে তাদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
অভিনন্দন জানাই তাদের অভিভাবকদের। আর যারা পাস করতে পারেনি তাদের আমি এটুকু বলবো যে, তারা যেন মন খারাপ না করে।
তারা যেন আবার নতুন উদ্যোগে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়। কারণ আমাদের ছেলে-মেয়েরা ফেল করবে কেন! ফেল করার তো কথা না।
সরকার প্রধান বলেন, আমি আশা করি, এ ক্ষেত্রে অভিভাবক ও শিক্ষক সবাই একটু মনযোগী হবেন। আমাদের ছেলে-মেয়েরা আসলেই খুব মেধাবী। একটু সুযোগ পেলে তারা অসাধ্য সাধন করতে পারে, এটা আমরা জানি। সেটা বিবেচনায় রেখে আমি মনে করি এদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া দরকার।
ছেলেরা পড়াশোনায় কিছুটা পিছিয়ে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পাসের হারে আমি দেখলাম, মেয়েদের সংখ্যা একটু বেশি। প্রায় আড়াই শতাংশ বেশি। আমি বলবো, ছেলেদের পড়াশোনায় আরও মনযোগী হওয়া দরকার।
শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষিত জাতি ছাড়া কখনো একটি দেশ উন্নত হতে পারে না। আমরা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই। আর দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সবচেয়ে বেশি দরকার শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। এটাই হচ্ছে মূল হাতিয়ার আমি মনে করি।
একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রের উপযোগী দক্ষতা অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করে সরকার প্রধান বলেন, শুধুমাত্র বিএ, এমএ পাস করলে হবে না। কোন একটা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ জ্ঞান নিতে হবে। তাহলে কর্মক্ষেত্র সুযোগ সৃষ্টি হবে, কর্মক্ষেত্র সম্প্রসারিত হবে। দেশে বিদেশে তারা কাজ পাবে।
দক্ষতা অর্জনে বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি বলেন, সময় নষ্ট না করে প্রশিক্ষণ নিতে পারলে কর্মক্ষেত্র সম্প্রসারিত হবে।
গবেষণা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে, নতুন বিষয় আসছে। যত বেশি গবেষণা করতে পারবো তত বেশি উৎকর্ষ আমরা সাধণ করতে পারবো।
মাদ্রাসায় পড়ুয়াদের প্রযুক্তি শিক্ষা দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষাটা যাতে তারা নিতে পারে। কারণ এই মাদ্রাসা শিক্ষার পরে ছেলে-মেয়েরা কোথায় গিয়ে কাজ করবে! সেজন্য তাদের ভোকেশনাল ট্রেনিং বা প্রযুক্তি শিক্ষা; এসব টেকনিক্যাল সাইডে যাতে তারা আরও ট্রেনিং নিতে পারে সেই সুযোগটা সৃষ্টি করা দরকার এবং তাদের উৎসাহিত করা দরকার। তাতে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
সরকার মাদ্রাসা শিক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা তো সবার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা অনেক মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করে দিয়েছি। শিক্ষকদের সরকারি চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি।
সরকার শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে এবং এজন্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে আমরা শিক্ষাকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি এবং স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি করার জন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নেই।
তিনি বলেন, আমরা শিক্ষাকে বহুমুখীকরণ করেছি। সারা দেশে, বিশেষ করে বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে সেদিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতি জেলায় আমরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছি। এতে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান হবে আবার উচ্চ শিক্ষার সুযোগও সৃষ্টি হবে। তাছাড়া আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। শিক্ষাকে আরও যুগোপোযোগী করা, বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যে সমস্ত বিষয় ভিত্তিক সেগুলো আমরা করেছি।
বিএনপি আমলে শিক্ষায় বাংলাদেশ পিছিয়ে যায় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আমাদের একটা প্রকল্পও ছিল নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। প্রত্যেকটা জেলা যেন নিরক্ষরতামুক্ত হয়, কয়েকটি জেলা নিরক্ষরতামুক্ত ঘোষণাও করেছিলাম। দুর্ভাগ্যের বিষয় ২০০১-এ আমরা আর সরকারে আসতে পারিনি। এরপরে বিএনপি-জামায়াত জোট আসে, সেই প্রজেক্ট আর সেভাবে কার্যকর হয়নি।
তিনি বলেন, আমাদের উদ্যোগের ফলে ৯৬ সালে যেখানে ৪৫ ভাগ আমরা স্বাক্ষরতার হার পেয়েছিলাম, অল্প সময়ের মধ্যে আমরা ৬৫ দশমিক ৫ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছিলাম। ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন আমরা দেখি ৬৫ দশমিক ৫ থেকে আর সামনে এগোতে পারেনি বরং আরও পিছিয়ে যায়। আবারও সেই ৪৫ বা ৫০-এর ঘরে চলে আসে। এরপর ক্ষমতায় এসে আমরা আবারও বিভিন্ন উদ্যোগ নেই।
২০২২ সালে অনুষ্ঠিত উচ্চ-মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে পরীক্ষার ফলাফলের পরিসংখ্যান ও প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফলাফলের সার্বিক পরিসংখ্যান তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। পরে বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যানরা স্ব স্ব বিভাগের ফলাফলের পরিসংখ্যান প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
Leave a Reply