বাড়ছে শীত, কমছে তাপমাত্রার পারদ। শীতের তীব্রতায় নাজেহাল পরিস্থিতির মুখে উত্তরের সীমান্ত জনপদ পঞ্চগড়। নতুন বছরের শুরুতে তাপমাত্রার পারদ ১০ ডিগ্রির নিচে অবস্থান করায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে এই অঞ্চলে। দুই দিন ধরে চলা শৈত্যপ্রবাহের দাপটে বিপাকে পড়েছে হতদরিদ্র থেকে নিম্ন আয়ের মানুষ। শীত থেকে বাঁচতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এই শ্রেণির মানুষগুলো।
আবহাওয়াবিদদের মতে, যেসব এলাকায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে, সেসব এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। সে হিসেবে উত্তরের এ প্রান্তিক জেলার ওপর দিয়ে দুই দিন ধরে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।
তবে জীবিকার তাগিদে হাড় কাঁপা কনকনে শীতের মধ্যেই গায়ে শীতের কাপড় পড়ে কাজে বের হতে দেখা গেছে কর্মজীবী মানুষদের। এদের মধ্যে কেউ যাচ্ছেন নদীতে পাথর তুলতে, কেউ চা বাগানে, কেউ ভোরের টাটকা সবজি তুলে খেতে। তবে ঘন কুয়াশা না থাকায় সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পূর্ব আকাশে দেখা মেলে পুবালি সূর্য। ধীরে ধীরে ফুটতে থাকে ঝলমলে রোদ। আর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মানুষের কর্মব্যস্ততা। তবে উত্তরের ঝিরিঝিরি বাতাসের কারণে দুর্ভোগ বাড়িয়েছে শীতের তীব্রতায়।
শুক্রবার রাতে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, দিনে যেমন-তেমন তাপমাত্রা, রাতে নেমে আসে জিরোতে। রাত ৯টার পর থেকে পায়ের তলা ঠান্ডায় বরফের মতো লাগে। পায়ে মোজা-জুতা পরলেও পায়ের তলা যেন বরফের মধ্যে রয়েছে। এমন ঠান্ডা, সহ্য করতে না পেরে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। বিশেষ করে উত্তর দিক থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ি বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা বাড়ছে কয়েকগুণ। আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষদের বেড়েছে দুর্ভোগ।
এদিকে শীত বাড়তে থাকায় জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিন সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগীরা ছুটছেন হাসপাতালে। এসব রোগীর মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা বেশি। যারা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তারাই কেবল হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। চিকিৎসকরা চিকিৎসার পাশাপাশি শীতে সুরক্ষিত থাকতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।
শীত নিবারণের জন্য পঞ্চগড়ের শীতার্ত মানুষের জন্য সরকারিভাবে ৩০ হাজার ৭৫টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক সাবেত আলী। তিনি বলেন, এ ছাড়া বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সংগঠন জেলার বিভিন্ন এলাকায় কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ করছে।
জেলার প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ বলেন, আজ শনিবার (৪ জানুয়ারি) ভোর ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৯টায় তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিশেষ করে এ এলাকায় হিমালয়ের হিম বায়ু সরাসরি প্রবেশ করায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আকাশে মেঘের পরিমাণ কমে গেছে। ফলে সকালেই সূর্যের মুখ দেখা মিলছে।
পঞ্চগড়ের শীতার্ত মানুষের জন্য সরকারিভাবে ৩০ হাজার ৭৫টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক সাবেত আলী। এ ছাড়া বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সংগঠন জেলার বিভিন্ন এলাকায় কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ করছে বলে জানান তিনি।
Leave a Reply