অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে প্রবল ঝড়ের আশঙ্কায় দেশের বহু এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে মিয়ানমার। এছাড়া দেশটির উপকূলীয় রাখাইন রাজ্য থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে লক্ষাধিক মানুষকে।
এমনকি রোববার (১৪ মে) আঘাত হানতে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় মোখা এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে মিয়ানমারে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হতে যাচ্ছে বলেও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। পৃথক দুই প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম সিজিটিএন এবং মিয়ানমারের অন্যতম প্রধান সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতী।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে প্রবল ঝড়ের আশঙ্কায় সর্বোচ্চ-স্তরের রেড অ্যালার্ট জারি করেছে মিয়ানমার। শনিবার এই রেড অ্যালার্ট সতর্কতা জারি করা হয়। এছাড়া রোববার আঘাত হানতে যাওয়া এই ঘূর্ণিঝড়টি গত এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হতে যাচ্ছে বলেও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া মিয়ানমারের পশ্চিম উপকূলে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া মৌসুমের প্রথম বড় ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে প্রতিবেশী বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে পৃথক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতী জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোখার ধ্বংসযজ্ঞের আশঙ্কায় মিয়ানমারের উপকূলের আশপাশের এলাকার লক্ষাধিক বাসিন্দা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ঘূর্ণিঝড় মোখা রোববার বিকেলে রাখাইনের সিট্যুয়ের কাছে আঘাত হানতে পারে এবং এর আগেই লক্ষাধিক রাখাইন বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছেড়েছেন।
ইরাবতী বলছে, রাখাইনের সিট্যুয়ের পাশাপাশি কিয়াউকফিউ, মংডু, রাথেদাউং, মাইবোন, পাউকতাও এবং মুনাং শহরে লাল সতর্কতা জারি করেছে মিয়ানমারের জান্তা। এছাড়া এই শহর ও এলাকাগুলোতে একই সতর্কতা জারি করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তা-বিরোধী বেসামরিক জাতীয় ঐক্য সরকার।
আরাকান আর্মির (এএ) মুখপাত্র খাইং থু খা বলেছেন, গত বুধবার থেকে তারা রাখাইনের প্রায় ১ লাখ ২ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নিয়েছে এবং তাদেরকে স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য সরবরাহ করছে। আরাকান আর্মির ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে ঝড়ের পর দুর্গত মানুষের জন্য সহায়তা প্রদান করতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতের আগে সিট্যুয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ বাসিন্দা তাদের বাড়ি ছেড়েছেন বলে জানিয়েছেন শহরটির বাসিন্দা ও লেখক ওয়াই হিন অং। রাখাইনের এই শহরের জনসংখ্যা এক লাখেরও বেশি এবং মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার কাজে সহায়তা করেছেন ওই লেখক।
ইরাবতী বলছে, সিট্যুয়ে এবং আশেপাশের গ্রাম থেকে আনুমানিক ১৫ হাজার লোক শহরের আর জাটে পাহাড়ের মঠে আশ্রয় নিয়েছেন। ওয়াই হিন অং বলেন, সেখানে আশ্রয় নেওয়া মানুষের জন্য খাদ্য, ওষুধ ও টয়লেট ব্যবস্থাপনার জরুরি প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
ইরাবতীকে তিনি আরও বলেন, ‘কোনও আন্তর্জাতিক সংস্থা এখনও পর্যন্ত আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি।’
এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক উ আয় অং-এর মতে, উপকূলীয় রাথেদাউং শহরের প্রায় ২ হাজার গ্রামবাসী সায়তি পাইন গ্রামের মঠ এবং স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। দ্য ইরাবতীকে তিনি বলেছেন, ‘আরাকান আর্মি বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার জন্য সতর্ক করেছিল এবং লোকেরা এখনও আমাদের গ্রামে প্রবেশ করছে।’
পাউকতাও টাউনশিপের একজন বাসিন্দা বলেছেন, বৃদ্ধ ও শিশুদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য এবং খাবার বিতরণের জন্য আরাকান আর্মি নৌকা ব্যবহার করছে।
Leave a Reply