এলাকায় জমি অধিগ্রহণ করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। অধিগ্রহণের পর সেসব জমিতে থাকা বাসাবাড়ি ও অবকাঠামো ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়।
সে নির্দেশ অনুযায়ী ৯০টির বেশি বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে। কিন্তু এক ব্যক্তি তার দোতলা বাড়ি ভাঙেননি। না ভেঙ্গে বরং গোটা বাড়িটি ৫৪ ফুট দূরে সরিয়ে নিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার বেগমপুর স্টেশন এলাকায় ঘটেছে এই ঘটনা।
এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানায়, স্টেশনের ২০ নম্বর রেলগেটের কাছে খোকন মণ্ডলের ২ হাজার ৮০০ বর্গফুটের দোতলা বাড়ি। দুই দশক আগে সেই বাড়ি নির্মাণ করেন খোকন মণ্ডল।
কিন্তু হঠাৎ বাড়ির জমি অধিগ্রহণ হওয়ায় বিপাকে পড়েন তিনি। প্রিয় বাড়িটি ভেঙে ফেলতে হবে, তা যেন মানতে পারছিলেন না খোকন। তাই অন্য উপায় খোঁজেন।
বাড়িটি যেখানে নির্মাণ করা হয়েছিল, তার পেছনে খোকন মণ্ডলদের আরও জমিজমা আছে। পরিকল্পনা করেন, বাড়িটি পিছিয়ে সেই জমিতে নিয়ে যাবেন তিনি। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী বাড়িটি তিনি ‘লিফটিং’ পদ্ধতিতে সরানোর কাজ শুরু করেন। ইতিমধ্যে দোতলা বাড়িটি তুলে সেখান থেকে ৫৪ ফুট দূরে বসানো হচ্ছে।
খোকন মণ্ডল বলেন, ‘অধিগ্রহণ করা জমির আওতায় আমার বাড়িটি পড়ে। এ জন্য আমার বাড়িটি সরাতে হচ্ছে। জমি অধিগ্রহণ করার পর আমি দেখলাম, আমার বাড়ির পেছনে আমাদের আরও জমি রয়েছে। পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে বাড়ির পেছনে থাকা নিজেদের জমিতে বাড়ি সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিই আমি।’
বাড়ি না ভেঙে কেন সরাচ্ছেন জানতে চাইলে খোকন মণ্ডল বলেন, ‘আমি বিদেশে গিয়ে কাজ করে টাকা জমিয়ে এই বাড়ি বানিয়েছিলাম। তাই এই বাড়ির প্রতি আমার একটা মায়াও আছে। এ কারণেই বাড়িটি ভাঙতে চাইছিলাম না।
এখনকার বাজারে এমন একটি বাড়ি নির্মাণে অন্তত ৪০ লাখ টাকা প্রয়োজন। সেখানে আমি দেখলাম, আমি যদি বিশেষ এই পদ্ধতি ব্যবহার করে বাড়িটি সরানোর কাজ করি, তাহলে ১৫–১৮ লাখ টাকায় আমার বাড়িটি সরানোর কাজ শেষ করা সম্ভব।’
বাড়িটি সরানোর কাজটি কারা করল, এমন প্রশ্নে খোকন বলেন, ‘হরিয়ানার একটি সংস্থা বাড়ি শিফটিং অথবা লিফটিংয়ের কাজ করে থাকে। সেই সংস্থা সম্পর্কে আমি জানতাম। এরপর আমি সিদ্ধান্ত নিই, সংস্থাটির মাধ্যমে বাড়িটি সরাব। এরপরই বাড়ি সরানোর কাজ শুরু করে দিই। ইতিমধ্যে অনেকটা কাজ শেষ হয়েছে।’
দোতলা একটি বাড়ি কীভাবে সরানো হচ্ছে জানতে চাইলে খোকন বলেন, ‘সবার আগে আমরা বাড়ি খালি করি। এরপর নিচতলার মেঝে খুঁড়ে গর্ত করে প্রথমে বাড়িটিকে আড়াই ফুটের মতো হাইড করা হয়। এরপর মেশিনের সাহায্যে দেয়াল কাটিং করে হাইড্রোলিক জগ লাগানো হয়।
পরে বাড়ির একদিকে লোহার চ্যানেল লাগিয়ে সেসব চ্যানেলে জগ ফিটিং করে চাপ তৈরি করে ধীরে ধীরে বাড়িটিকে সরানো হচ্ছে। এ ধরনের মোট ৪০০টি জগ ব্যবহার করা হয় বাড়িটি তোলার জন্য।’
খোকনের বাড়িটি সরানো দেখতে অনেক মানুষ ভিড় করছেন। তবে এ কাজ করতে গিয়ে নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলেন জানান খোকন।
বলেন, ‘মাটি নরম থাকায় কখনো কাজ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। অন্য সমস্যাও হচ্ছে।’ তবে সমস্যা যতই আসুক, প্রিয় বাড়িটি নষ্ট হতে দেবেন না বলেই জানালেন খোকন মণ্ডল।
Leave a Reply