ঈদ এলেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে দেখা দেয় তীব্র যানজট। রাজধানীর বনানী থেকেই এই যানজটের প্রভাব দৃশ্যমান হয়। এবার টঙ্গী সেতু থেকে মিলগেট পর্যন্ত তিন কিলোমিটার ছাড়া বাকি পথের কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ। এখন সব দুশ্চিন্তা এই তিন কিলোমিটার পথ নিয়ে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরনো টঙ্গী সেতু ভেঙে নতুন সেতু তৈরি করা হচ্ছে। যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে ওই অংশে তিনটি বেইলি সেতু বসানো হয়েছে। দুটি বেইলি সেতু দিয়ে ঢাকামুখী পরিবহন এবং অন্যটি দিয়ে গাজীপুরমুখী পরিবহন যাতায়াত করছে। সরু বেইলি সেতুতে যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় যানজট লেগেই আছে। ঈদ যাত্রায় প্রতিবছর যানজটের সূত্রপাত এই সেতু থেকেই হয়। আবার সেতুর ওপর উড়ালপথ এবং নিচে সড়কের কার্পেটিং অনেক জায়গায় শেষ হয়নি।
কাজ চলমান থাকায় মহাসড়ক কোথাও তিন লেন, কোথাও আবার দুই লেনে পরিণত হয়েছে। এতে টঙ্গী এলাকায় যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। এ কারণে প্রায়ই সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। আবার টঙ্গী সেতু থেকে মিল গেট পর্যন্ত সড়কের কোথাও ভাঙাচোরা, কোথাও খানাখন্দে ভরা। আবার কোথাও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। অনেক জায়গায় সড়ক দখল করে চলছে ভাসমান ব্যবসা। সড়কের কোথাও কোথাও যত্রতত্র রিকশা, লেগুনা, ব্যক্তিগত গাড়ি রাখা হচ্ছে। এসব কারণে যানজটের আশঙ্কা আরো বাড়ছে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে চলাচলকারী আলম এশিয়া পরিবহনের চালক বেলাল হোসেন জানান, এই ঈদে মহাসড়কে তাঁদের বড় দুশ্চিন্তা টঙ্গী সেতু থেকে মিল গেট পর্যন্ত এলাকা। দ্রুত মেরামত না করলে এ অংশে তীব্র যানজটের শঙ্কা রয়েছে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামছুল হক বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে বিআরটি (বাস র্যাপিড ট্রানজিট) প্রকল্প। যদিও এখন এই সড়কের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। তবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে মুশকিল হবে। গাড়িগুলো যদি ধাপে ধাপে সুশৃঙ্খলভাবে যায় তাহলে যানজটের ভয়াবহতা তৈরি হবে না।
এদিকে টঙ্গী ও সেনা কল্যাণ মার্কেটের সামনে সড়কের মাঝখানে কাদাপানি। সামান্য বৃষ্টি হলে সড়ক তলিয়ে যায়। বাটা গেট এলাকায় উড়াল সড়কের নিচের অংশ ভাঙাচোরা। সেখানে ঢাকামুখী লেনে চলছে নির্মাণকাজ। এ জন্য কেটে ফেলা হয়েছে সড়কের বড় একটি অংশ। এই জায়গায় বিআরটির উড়ালসড়কের ওপরের স্টেশনে ওঠার জন্য লিফট বসানোর কাজ চলছে। এ কারণে ঢাকামুখী সড়ক এক লেনে পরিণত হয়েছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের (ট্রাফিক) উপকমিশনার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ঈদ যাত্রা যেন নির্বিঘ্ন করা যায়, সে জন্য টঙ্গী অংশের কাজ দ্রুত শেষ করতে বিআরটি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তা ছাড়া ঈদের ছুটির আগেই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হবে। তাই দুশ্চিন্তার কারণ নেই। অন্য সময়ের তুলনায় এবার ঈদ যাত্রা হবে স্বস্তিদায়ক।
টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, টঙ্গী স্টেশন রোড থেকে কামারপাড়া মোড় পর্যন্ত উড়াল সড়কের ১০টি খুঁটি ও খুঁটির ওপরে গার্ডার বসানোর কাজ চলছে। খুঁটির আশপাশে মূল সড়কে নির্মাণসামগ্রী, ক্রেন ও সাটারিংয়ের জিনিসপত্র যত্রতত্র ফেলে রাখা হয়েছে। এতে দুই লেনই সংকুচিত হয়ে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। একইভাবে গাজীপুরা ও বাড়াবাড়ি এলাকায় সড়কের মাঝখানে বিআরটি স্টেশনের কাজ চলায় সেখানেও সংকুচিত হয়ে আছে মূল সড়ক।
সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. ইসহাক বলেন, ‘ঢাকা-ময়মনসিংহ পথে আগের মতো সমস্যা হবে না। গাজীপুরের কাজ অনেক এগিয়েছে। সড়কে যেন যানবাহন নির্বিঘ্নে চলতে পারে ঈদের আগে সে ব্যবস্থা করা হবে। ট্রাফিক ব্যবস্থা ঠিক রাখার জন্য একাধিক বৈঠক হয়েছে। আশা করছি, এই ঈদে তেমন ভোগান্তি হবে না।
Leave a Reply