ত্যাগের মহিমার বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) সারা দেশে পালিত হবে মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় প্রতিবারের ন্যায় পশু কোরবানি করবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। ঈদের আনুষ্ঠানিক অন্যতম হলো সবাই মিলে ঈদগাহে জামাত আদায় করা। প্রতিবারের ন্যায় এবার রাজধানীসহ সারা দেশে পবিত্র ঈদের জামাত আদায়ের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে সংশ্লিষ্টরা।
বরাবরের মতো এবারও রাজধানীতে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত হবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে, সকাল সাড়ে ৭টায়। প্রধান জামাতে ইমামতি করবেন তেজগাঁও রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সম্পাদক ড. মাওলানা মুশতাক আহমেদ। রাষ্ট্রপতি, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, কূটনৈতিকসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ এ জামাতে অংশ নেবেন। তবে রাষ্ট্রপতি পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন।
ঈদ জামাতের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত করা হয়েছে হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠ। সেখানে একসঙ্গে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। প্রধান ঈদ জামাত ঘিরে কয়েক স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা ঈদগাহ মাঠ পরিদর্শন করে জঙ্গি হামলাসহ অন্যান্য নিরাপত্তার কোনো হুমকি নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন।
আবহাওয়া প্রতিকূল হলে বা অন্য কোনো অনিবার্য কারণে জাতীয় ঈদগাহ মাঠে জামাত অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে সকাল ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ঈদগাহ মাঠে থাকবে পর্যাপ্ত চিকিৎসক
এবারের ঈদের জামাত সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে পর্যাপ্ত অজুখানা, শৌচাগার, নারীদের আলাদা পথ রাখার পাশাপাশি খাবার পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ঝড়বৃষ্টিতে ক্ষতি থেকে বাঁচাতে পুরো মাঠে ত্রিপল দেওয়া হয়েছে।
মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবায় প্রতিবারের মতো এবারও থাকছে চিকিৎসক দল। সিভিল সার্জনসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে আলাদা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র করা হয়েছে। সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে ব্যাপক মুসল্লির অংশগ্রহণে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন দক্ষিণ সিটির মেয়র।
বায়তুল মোকাররমে ৫টি জামাত
এদিকে প্রতিবছরের মতো এবারও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায়ে পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত সকাল ৭টায়, তারপর এক ঘণ্টা পর পর তিনটি জামাত এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে।
প্রথম জামাত : সকাল ৭টায়
প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক, মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ খাদেম আব্দুল হাদী।
দ্বিতীয় জামাত : সকাল ৮টায়
ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম মাওলানা মুহীউদ্দিন কাসেম। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররমের অবসরপ্রাপ্ত মুয়াজ্জিন হাফেজ ক্বারী মো. আতাউর রহমান।
তৃতীয় জামাত : সকাল ৯টায়
ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির মাওলানা আবু সালেহ পাটোয়ারী। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররমের চিফ খাদেম মো. শহিদ উল্লাহ।
চতুর্থ জামাত : সকাল ১০টায়
ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মাওলানা মো. আনিসুজ্জামান সিকদার। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের খাদেম হাফেজ মো. রুহুল আমিন।
পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত : সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে
সর্বশেষ এ জামাতে ইমাম থাকবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। মুকাব্বির থাকবেন খাদেম হাফেজ মো. জহিরুল ইসলাম।
কেমন থাকবে ঈদের দিনের আবহাওয়া
মঙ্গলবার থেকে রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব জায়গায় বৃষ্টি হচ্ছে। বুধবার সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৯ ঘণ্টায় ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়াও কুমিল্লায় ৫৯ মিলিমিটার, খুলনায় ৫৩ মিলিমিটার, যশোরে ৫৪ মিলিমিটারসহ সারা দেশে কমবেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। যা বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) ঈদের দিনেও চলবে। আবহাওয়ার অফিস জানিয়েছে, ঈদের দিন সকাল থেকে রাজধানীসহ দেশের সব বিভাগে ভারী বৃষ্টিপাত হবে। তবে দুপুরের দিকে সেই বৃষ্টি কিছুটা কমে আসতে পারে। সন্ধ্যায় আবার বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে।
বুধবার (২৮ জুন) সকালে আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ তরিকুল নেওয়াজ কবির বলেন, বুধবারের ন্যায় বৃহস্পতিবার দেশের সব বিভাগে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবে। তার সঙ্গে কোথাও কোথাও মাঝারি ও ভারী বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হওয়া বয়ে যেতে পারে।
তিনি জানান, বিভাগভিত্তিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস বললে ঈদের দিন রাজশাহী বিভাগে বৃষ্টি কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, বাকি বিভাগগুলোতে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়বে। যেমন আজ বুধবার সারা দিন খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে বৃষ্টিপাত বেশি হতে পারে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।
জায়নামাজ-ছাতা ছাড়া অন্য কিছু সঙ্গে আনা যাবে না
ঈদের নামাজ আদায় করতে জাতীয় ঈদগাহ মাঠে জায়নামাজ-ছাতা ছাড়া অন্য ব্যাগ জাতীয় কিছু আনা যাবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। বুধবার সকালে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের নেওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে তিনি এ কথা জানান।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঈদ জামাতকে কেন্দ্র করে জঙ্গি বা নতুন কোনো হুমকি নেই। তবে শোলাকিয়া ঈদগাহে অতীতের দুর্ঘটনার বিষয়টি মাথায় রেখে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ঢাকায় যেসব স্থানে ঈদে জামাত হবে
ঢাকার ১ হাজার ৪৩৫টি মসজিদ ও ১৮৯টি ঈদগাহে ঈদের জামাত হবে এবার। সে অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সকাল ৮টায় এবং ৯টায় দুটি জামাত হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায়, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে সকাল ৮টায় এবং ফজলুল হক মুসলিম হলের পূর্ব পাশের খেলার মাঠে সকাল সাড়ে ৭টায় জামাত হবে। আবহাওয়া খারাপ হলে হলের মসজিদে জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
আজিমপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকার বায়তুন নূর জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় হবে ঈদের জামাত। আবহাওয়া খারাপ হলে ঈদের জামাত হবে কেন্দ্রীয় মসজিদ বা হলের মসজিদে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের জামাত হবে সকাল ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে। আবহাওয়া ভালো না থাকলে বা বৃষ্টি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত তিনটি মসজিদে ঈদ জামাত হবে। আজিমপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকার বায়তুন নূর জামে মসজিদে ঈদের জামাত হবে সকাল ৮টায়।
জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার টানেলে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজের জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ, হুইপবৃন্দ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্যবৃন্দ ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মচারীসহ মুসল্লিরা এ জামাতে অংশ নেবেন।
এছাড়া মগবাজারের বিটিসিএল (সাবেক টিঅ্যান্ডটি) কলোনির জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। এ জামাত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
এছাড়া গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদে সকাল সাড়ে ৬টা, সাড়ে ৭টা ও সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। লালবাগ শাহী মসজিদে সকাল ৭টা ও ৮টায় ঈদের দুটি জামাত হবে। পুরান ঢাকা তারা মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় ও ৮টায় হবে ঈদের জামাত। সোবহানবাগ জামে মসজিদে সকাল ৭টায় হবে ঈদ জামাত।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ছয়টি জামাত হবে। মারকাজুল ফিকরিল ইসলামী (বড় মসজিদ) মসজিদে সকাল ৭টায়, সকাল সোয়া ৭টায় সি ব্লকের উম্মে কুলসুম জামে মসজিদে, সাড়ে ৭টায় এফ ব্লক জামে মসজিদে, ৮টায় জি ব্লকের বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদে ঈদ জামাত হবে। কে ব্লকের মদিনাতুল উলুম মসজিদে সকাল ৭টায় এবং এন ব্লকের ফকিহুল মিল্লাত মুফতি আবদুর রহমান জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদের জামাত হবে।
এছাড়া রাজধানীর ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদে সকাল ৭টা ও সাড়ে ৮টায়, ধানমন্ডি ঈদগাহ জামে মসজিদে সকাল ৭টায়, মিরপুর দারুস সালাম এলাকার মীর বাড়ি আদি (মাদবর বাড়ি) জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় ও সকাল ৮টায়, মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের হারুন মোল্লাহ্ ঈদগাহে সকাল ৭টায়, মতিঝিলের আরামবাগের দেওয়ানবাগ শরিফে সকাল ৭টা ও সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
দারুস সালামের মাতবর বাড়ি জামে মসজিদে সকাল ৭টায় ও সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদ জামাত হবে। এলিফ্যান্ট রোডের তাকওয়া মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায়, বায়তুল আমান জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায়, ঈদগাহ মাঠে সকাল ৮টায় জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
এবার ১৯৬তম ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। সকাল ৯টায় এ জামাতে ইমামতি করবেন মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। শোলাকিয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাচ্ছে দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ বড় ময়দান। গত ঈদুর ফিতরে প্রায় ২২ একর আয়তনের এ মাঠে পাঁচ থেকে ছয় লাখ মানুষ সেখানে একসঙ্গে নামাজ পড়ছেন বলে দাবি করেছেন আয়োজকরা। এবারও সকাল সাড়ে ৮টায় সেখানে ঈদের জামাত হবে।
Leave a Reply