রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তাহের হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি জাহাঙ্গীর আলমের রায় স্থগিতে এবার মার্কিন দূতাবাসের দ্বারস্থ হয়েছে তার পরিবার। গত রোববার জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই মিজানুর রহমান দূতাবাসে গিয়ে আবেদন ও মামলার নথিপত্র জমা দিয়েছেন।
দূতাবাসের কাছে তারা অভিযোগ করেছেন, এ মামলায় ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ড. মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলম। তাই ফাঁসির রায় স্থগিতে মার্কিন দূতাবাসের হস্তক্ষেপ চান তারা।
মিজানুর রহমান বলেন, দূতাবাস থেকে এখনো কোনো সাড়া মেলেনি। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, দূতাবাস কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে কথা বলবে।
মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘আমরা এই মামলার কাগজপত্র দূতাবাসের একজন কর্মকর্তার হাতে দিয়েছি। বলেছি- আসামিদের ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে কোনো মিল নেই। জবানবন্দিতে বলা হয়েছে, বালিশ চাপায় হত্যা করা হয়েছে।
‘কিন্তু ফরেনসিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঘাড়ে ভারী কিছুর আঘাতের কারণে ড. তাহের মারা গেছেন। এখানে দুই রকম তথ্য। হত্যাকাণ্ডের আগেই ড. মিয়া মহিউদ্দিনের পদোন্নতি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছিল। কাজেই আমাদের উকিলের এসব যুক্তিতর্ক আমলে নেওয়া হয়নি। তাই আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। আমরা সংবিধানের ৩৩/২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে মার্কিন দূতাবাসের হস্তক্ষেপ চেয়েছি।’
এদিকে, এ মামলায় আগামী ২৫ জুলাই রাতে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি কার্যকর হতে পারে এমন আভাস পাওয়া গেছে। এদিন একই মঞ্চে দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হবে। তবে কারা কর্তৃপক্ষ ফাঁসির দিনক্ষণের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে রাজি হয়নি।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আবদুল জলিল বলেন, ‘আর কোনো আইনি বাধা না থাকলে চলতি মাসেই ফাঁসি কার্যকর হবে। সুনির্দিষ্ট করে তারিখ বলা যাচ্ছে না।’
ফাঁসির রায় কার্যকরের আগের সব ধাপ শেষ হওয়ার পর জাহাঙ্গীরের ভাই সোহরাব হোসেন উচ্চ আদালতে একটি রিট মামলা করেছিলেন। ওই রিটে বলা হয়, রাজশাহীর মতিহার থানায় মো. জাহাঙ্গীর আলমকে ২০০৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আটক রাখা হয়েছিল; যা সংবিধান ও ফৌজদারি কার্যবিধির লঙ্ঘন। এই রিট মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জাহাঙ্গীরের সাজার ওপর স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছিল আবেদনে। তবে রিটটি খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
গত সোমবার বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি মো. আলী রেজার বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এসএন গোস্বামী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।
Leave a Reply