রাজশাহীর গোদাগাড়ী প্রেমতলী এলাকায় ই মুভি চীনা অ্যাপের প্রথম প্রচারণা চালানো কে এই ৪ যুবক। এই চার যুবক ওই এলাকায় প্রথমে মানুষের কাছে প্রচার করে কথিত চীনা অ্যাপের বিষয়। সম্প্রতিক তারা ঢাকায় চীনা নাগরিকের সাথে সেমিনার করার কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তারাই প্রথমে মানুষকে বুঝিয়েছে তারা অ্যাপ থেকে টাকা ইনকাম করছে। করেছে বাড়ি গাড়ি। তাদের এ প্রচারনা ব্যাপক ভাবে ছাড়িয়ে পড়ে গোদাগাড়ী এলাকার প্রতিটি ঘরে ঘরে। তাদের কথা মতো মানুষ টাকা দিয়ে হিসাব খুলেছে বলে অভিযোগ করেন প্রতারণার শিকার একাধিক মানুষ।
জানা গেছে, গোদাগড়ী প্রেমতলী এলাকার আমিনুলের ছেলে শিহাব, মিলনের ছেলে তৌফিক, শামসুলের ছেলে মিঠু, সাইদুরের ছেলে শাওন, আনসারের ছেলে রুস্তুম এই যুবকরাই গোদাগাড়ী প্রেমতলী এলাকায় প্রথমে প্রচার করে ই মুভি অ্যাপের বিষয়। এই অ্যাপের মাধ্যমে মানুষ প্রতারণার শিকার হওয়ার কিছু দিন আগেই ওই চার যুবক সাম্প্রতিক ঢাকায় একটি বিলাশ বহুল হোটেলে চীনা নাগরিকদের সাথে সেমিনার করেন। সেই সেমিনারে তাদের ভুমিকা ছিল অন্যতম। সাম্প্রতিক তাদের ওই সেমিনারের কিছু ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। তার প্রতারণার শিকার একাধিক মানুষ তাদের কেই প্রতারণার মুল হোতা বলছে।
প্রতারণার শিকার একাধিক মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শিহাব, মিলন, মিঠু শাওন, রুস্তম এরাই প্রতারণার মুল হোতা। তারা এলাকায় প্রচার করেছে অ্যাপের মাধ্যমে টাকা ইনকাম করছি আমরা। তোমরাও কাজে লাগাও। তারা মানুষকে বোঝায়, এই অ্যাপে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা দিয়ে হিসাব খুলতে হবে। তারপর এই টাকাকে ডলারে পরিণত করার জন্য নগদ বা বিকাশের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে হবে। এরপর সিনেমার টিকিট কিনলেই মুনাফা হিসেবে ডলার যোগ হবে। তবে যে যত বেশি টাকা দিয়ে হিসাব নম্বর খুলবে, তার মুনাফার হার তত বেশি। আবার অন্যজনকে হিসাব নম্বর খুলে দিলেও নিজের হিসাব নম্বরে বাড়তি ডলার যোগ হতো। গত অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি থেকে রাজশাহীর বিভিন্ন গ্রামে এই অ্যাপ যুবসমাজের মধ্যে ঝড় তুলেছিল। প্রথম দিকে যাঁরা করেছেন, তাঁরা টাকা তুলেছেন। কেউ কেউ অনেক টাকার মালিক হয়েছেন। জমা হওয়া টাকা বিকাশ বা নগদের মাধ্যমেই ‘ক্যাশ আউট’ করা গেছে। গত সোমবার থেকে তাঁদের হিসাব নম্বর শূন্য হয়ে গেছে। এখন তাঁরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।
সোমবার বিকেলে গোদাগাড়ী প্রেমতলী এলাকায় গিয়ে একাধিক মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এলাকার চার যুবক এই নতুন অ্যাপের প্রচারণা চালিয়েছেন। তাঁরা লাভবান হয়েছেন। বাড়িগাড়ি করেছেন। আর অন্যদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। তার মানে তারা এই প্রতারক চক্রের সাথে জড়িতো। এই চার যুবক এমন ভাবে প্রচার করেছে স্মার্টফোন আছে এমন কোনো বাড়ির মানুষ এই প্রতারণা থেকে রেহাই পাননি।
মাটিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল রানা বলেন, আমার ইউনিয়নের প্রেমতলী, ডুমুরিয়া, খেতুর পাশের ইউনিয়নের ফরহাদপুর গ্রামের কোনো মানুষ বাদ নেই। কেউ মুখে স্বীকার করছেন, কেউ লজ্জায় বলতে পারছেন না। তিনি আরও বলেন, এলাকার চার যুবক এই নতুন অ্যাপের প্রচারণা চালিয়েছেন। তাঁরা লাভবান হয়েছেন। বাড়িগাড়ি করেছেন। আর অন্যদের সর্বনাশ হয়ে গেছে।
এদিকে, ‘চীনা অ্যাপ ই-মুভির’ কার্যক্রম চালানোর জন্য রাজশাহী নগরের সিরোইল কলোনি এলাকায় একটি কার্যালয় খোলা হয়েছিল। গত মঙ্গলবার থেকে ওই কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। কার্যালয়টির প্রধান ছিলেন আজমল হুদা ওরফে মানিক নামের এক ব্যক্তি। তিনি একজন হোমিও চিকিৎসক। তাঁর বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলার বিলউথরাই গ্রামে। স্থানীয় লোকজন জানান, মানিক একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বলে তাঁরা জানেন।
তবে এ বিষয় ওই চার যুবকের সাথে মুঠো ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে তাদের সাথে কথা বলা যায়নি।
এ বিষয় রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক্রাইম এন্ড অপস্ সনাতন চক্রবর্তী বলেন, বিষয়টি নিয়ে পুলিশের গোয়েন্দারা কাজ করছে। অ্যাপের মাধ্যমে কোন যুবক প্রতারণার সাথে জড়িতো থাকলে প্রমানসহ কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply