শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার দুদুয়ার খালে পানি না থাকায় সেচসংকটে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ৩০০ একর বোরো খেত। গত এক সপ্তাহে খেতে সেচ দিতে না পারায় ফসল শুকিয়ে গেছে। এ নিয়ে রূপাকুড়া ও মানুপাড়া গ্রামের দেড় শতাধিক কৃষক আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তাঁরা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সেচপাম্পের মাধ্যমে দুদুয়ার খালে সপ্তাহে দুদিন পানি দেওয়ার দাবি জানান।
গতকাল সোমবার দুপুরে রূপাকুড়া ও মানুপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, দুদুয়ার খালটি শুকিয়ে গেছে। এর দুই পাশে কৃষক জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। খেতে পানি না থাকায় অধিকাংশ খেতে ছোট ছোট ফাটল দেখা দিয়েছে।
মানুপাড়া গ্রামের কৃষক মোস্তফা আলী বলেন, ৩ একর জমিতে ৯০ হাজার টাকা খরচ করে বোরো চাষ করেছেন। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে খালে পানি নেই। খেতে সেচ দিতে পারছেন না। খেতে ফাটল ধরেছে। যদি দুই একরে মধ্যে পানি দিতে না পারেন, তাহলে ফসল মরে যাবে।
নয়াবিল গ্রামের জুলহাস উদ্দিন বলেন, ‘ঋণ-ধার কইরা ১৫ কাঠা (শতক) জমিতে বোরো লাগাইছি। বাকি ২০ কাঠা ভিজাইছি। কিন্তু খালে পানি না থাহুনে আবাদের খেত শুকাইয়া গেছে। বাহি ২০ কাঠা কেমনে লাগাইমু। সরকার যদি পানির ব্যবস্থা না করে, তাইলে কৃষকগরে মরণ ছাড়া কোনো উপায় থাকত না।’
স্থানীয় একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নে সীমান্তবর্তী নাকুগাঁও পাহাড় থেকে ঝরনার পানি দুদুয়ার খালে নেমে আসে। খালটি রূপাকুড়া ও মানুপাড়া হয়ে দক্ষিণ দিকে বয়ে গেছে। বোরো মৌসুমে এই খালের পানি দিয়ে দুই গ্রামের তিন শতাধিক কৃষক ৫০০ একর জমিতে বোরো আবাদ করে থাকেন। এক মাস আগে রূপাকুড়া ও মানুপাড়া গ্রামের শতাধিক কৃষক দুদুয়ার খালে মাটির বাঁধ দিয়ে পানি মজুত করেন। ১৫ দিন আগে সেই পানি দিয়ে রূপাকুড়া গ্রামে ২০০ একর ও মানুপাড়ায় ১০০ একর জমিতে বোরো চাষ করা হয়। কিন্তু খাল শুকিয়ে যাওয়ায় এক সপ্তাহ ধরে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে খেতে ছোট ছোট ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে।
কৃষকেরা বলেন, দুদুয়ার খালের পাশে বিএডিসির সেচপাম্প বসানো আছে। এর মাধ্যমে তাঁরা সপ্তাহে ১-২ দিন খালে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করার কথা বলেন। তা না হলে রূপাকুড়া ও মানুপাড়া গ্রামের শতাধিক কৃষকের ৩০০ একর বোরো আবাদ রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
রূপাকুড়া গ্রামের কৃষক মাসুম মিয়া বলেন, ‘বোরো আবাদ লইয়া আমরা মহাবিপদে পড়ছি। খালে পানি নাই। তাই খেতে সেচ দিবার পাইতাছি না। খালের কাছেই বিএডিসির পাম্প আছে। কৃষকগর কথা চিন্তা কইরা যদি সপ্তাহে এক বা দুই দিন খালে পানি দেওয়া অইত, তাইলে ৩০০ একর বোরো আবাদ রক্ষা করা যাইত।’
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সেচসংকটের জন্য আবাদ ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি তিনি জানেন না। সেচসংকট নিরসনে দ্রুত সেচ কমিটির সমন্বয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ফসল রক্ষায় সেচ দিতে প্রয়োজনে বিকল্প পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, তিনি ঘটনাস্থলে যাবেন। সেচসংকট নিরসনে প্রয়োজনে বিএডিসির সেচপাম্প দিয়ে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
Leave a Reply