করোনা (কোভিড-১৯) আক্রান্ত ৩৪ ভাগ মানুষের স্মৃতিশক্তি কমে গেছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। এ ছাড়া কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর আগে থেকে ডায়াবেটিসে ভোগা ৫০ ভাগ মানুষের এ-সংক্রান্ত জটিলতা আরও বেড়েছে।
কোভিডে ভোগা ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকারভিত্তিক এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। ‘হাসপাতালে ভর্তি কোভিড-১৯ রোগীদের পরবর্তী শারীরিক জটিলতা ও অন্যান্য রোগের সম্পর্ক নিরূপণ’ শীর্ষক এই গবেষণা এশিয়া প্যাসিফিক পাবলিক হেলথ জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়। এতে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অলক পাল। গবেষণার সঙ্গে আরও যুক্ত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
২০২০ সালের মে থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ১ হাজার ২০৭ জন কোভিড-১৯ রোগীর ওপর এই সমীক্ষাটি হয়। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর এসব রোগীর ১৭টি বিভিন্ন প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে জরিপ গবেষণাটি তৈরি করা হয়। এর মধ্যে ৬৫ দশমিক ৫ ভাগ পুরুষ। তাঁদের বয়স ছিল ২৬ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত। জরিপ গবেষণায় অংশ নেওয়া ৭৩ ভাগ ঢাকা শহরের বাসিন্দা। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার ছয় মাসের মধ্যে তাঁদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক অলক পাল বলেন, কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর নারী-পুরুষের শারীরিক নানা উপসর্গ এবং কোভিডকালীন লক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের ভিত্তিতে এই জরিপ গবেষণাটি পরিচালিত হয়। এখানে দেখা যায় যাঁদের আগে ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ ছিল, তাঁদের এখন সমস্যা আরও বেড়েছে। নতুন করে শক্তি কমেছে ও দুর্বলতা বেশি করে দেখা দিয়েছে।
জরিপে দেখা যায়, কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার পর ৩৪ ভাগ রোগীর স্মৃতিশক্তি কমেছে। এই সমস্যাটা তাঁদের আগে ছিল না। এ ছাড়া ২৮ শতাংশের ঘুমের বিঘ্ন হচ্ছে নানা রকমভাবে। এ ছাড়া একটু পরিশ্রম করলে ৫৫ ভাগের শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।
জরিপে আরও বলা হয়, কোভিড রোগীদের ৬২ ভাগের আগে থেকে নানা রকম শারীরিক জটিলতা ছিল। এর মধ্যে ৫০ দশমিক ৬ ভাগ ডায়াবেটিসে ও ২০ ভাগ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। এ ছাড়া ১৩ ভাগ অ্যাজমা, ৮ ভাগ লিভার ও পেটের পীড়ায় এবং ৬ ভাগের হৃদ্রোগের জটিলতা ছিল।
রোগীদের ৬৬ শতাংশ দুই সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন। কিন্তু যাঁদের অন্যান্য জটিলতা আগে থেকে ছিল, তাঁদের দীর্ঘ সময় হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। তবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর তাঁদের এই সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। যাঁরা কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন, তাঁদের কারও কারও ডায়ালাইসিস নিতে হয়েছে। উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা আরও জটিল পরিস্থিতিতে পড়েছেন। যাঁদের হৃদ্রোগের সমস্যা ছিল, সে সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে বলে জানান জরিপকারীরা।
অলক পাল বলেন, পুরুষের তুলনায় নারীদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বেশি হয়েছে। আর অ্যাজমা রোগীদের আগের চেয়ে অ্যাজমা তিন গুণের বেশি বেড়েছে বলে জরিপে উঠে আসে।
কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার সময় এসব ব্যক্তিরা কী ধরনের জটিলতায় ভুগেছিলেন, সে সম্পর্কেও তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। দেখা যায় ৫১ ভাগ রোগীর জ্বর ছিল। শরীরের ব্যথা ছিল ৩৩ শতাংশের। শ্বাসকষ্টের সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন ৩২ শতাংশ। স্বাদহীনতা ছিল ১৮ ভাগের।
এই জরিপ গবেষণার সঙ্গে আরও যুক্ত ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মহিউদ্দিন শরীফ, শফিকুল বারী ও টিটু মিয়া। এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক রোবেদ আমিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনার্ধন মোহান্ত ও সেন্টার ফর পার্টিসিপারি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের মো. আকিব জাবেদ।
Leave a Reply