কর্মজীবী মানুষের বেশিরভাগই অফিসে শেষে বাসায় ফেরেন ইফতারের আগে। সবার টার্গেট বাসায় ইফতার করা।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো. তানজিদ হোসেন অফিস শেষে বের হন বেলা ৩টায়। কিন্তু মতিঝিল থেকে মোহাম্মদপুরের বাসায় পৌঁছাতে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে তার। এরপরও তিনি খুশি। ইফতারের কিছু আগে বাসায় পৌঁছে পরিবারের সঙ্গে ইফতারটা করতে পারেন।
রমজান উপলক্ষে সরকারি অফিসের সময়সূচি পরিবর্তন করেছে সরকার। বিকেল ৫টার পরিবর্তে রমজান মাসে ৩টায় ছুটি পাচ্ছেন অনেকে। আর এ সময় বের হলে তানজিদ হোসেনের মতো হাজার হাজার কর্মজীবী যানজটের ভোগান্তিতে পড়ছেন।
সোমবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোয় সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুর ২টা থেকে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাচ্ছে। আর ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত প্রচণ্ড যানজটের শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।
যদিও রোজা শুরুর আগের দিন ১১ মার্চ ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রমজানে মানুষজন যেন বাসায় গিয়ে প্রিয়জনের সঙ্গে ইফতার করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি ডিএমপির অপরাধ বিভাগগুলোও কাজ করবে। বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত আমাদের বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। একই সময়ে রাস্তায় বেশি পুলিশ মোতায়েন রাখা হবে, যাতে করে মানুষ ঘরে গিয়ে ইফতার করতে পারেন।
প্রতিবছর রমজান মাসে ‘বিশেষ’ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও যানজট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ।
রাজধানী ঢাকায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবচেয়ে যানজট বাড়ে তিনটি সড়কে। সড়ক চারটি- ১) কুড়িল চৌরাস্তা থেকে প্রগতি সরণি হয়ে রামপুরা, ২) মগবাজার থেকে সাতরাস্তা মোড় হয়ে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড সড়ক, ৩) মিরপুর রোড হয়ে নিউ মার্কেট সড়ক এবং ৪) মতিঝিল টিকাটুলি হয়ে যাত্রাবাড়ী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রধান সড়ক হওয়া স্বত্বেও যান্ত্রিক বাহনের সঙ্গে ভ্যান-রিকশার মতো পা-চালিত বাহনও চলছে সড়কগুলোয়। এছাড়া রাস্তার দুই ধারে ভ্রাম্যমাণ দোকানিদের কারণে যানজট বাড়ছে। একইসঙ্গে প্রগতি সরণি ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ড সড়কে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচলের কারণে সেটি তীব্রতর হচ্ছে।
এদিকে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এফডিসি অংশের র্যাম্প (নামার রাস্তা) খুলে দেওয়ার পরে সাতরাস্তা সংলগ্ন রাস্তায় যানজট বেড়েছে। এই র্যাম্পের কারণে কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও, মগবাজার এলাকায় যানজট আরও তীব্র হয়েছে।
ভুক্তভোগী মানুষ বলছেন, সড়কে শৃঙ্খলা না থাকায় দিনদিন বাড়ছে যানজট। বৃহৎ নগরীতে সুশৃঙ্খল গণপরিবহন ও ট্রাফিক ব্যবস্থা থাকে, যেটা আমাদের দেশে অনুপস্থিত। ফলে যানজটের কবল থেকে মুক্ত হচ্ছে না মেট্রোপলিটন ঢাকা।
ভুক্তভোগীরা আরও বলছেন, বাসায় গিয়ে ইফতার করার সুবিধার্থে সরকার অফিসের সময় কমিয়েছে। কিন্তু যানজটের কারণে অনেকেই ইফতারের আগে বাসায় পৌঁছাতে পারছেন না। এ জন্য শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা দায়ী।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নতির দাবি করলেও বাস্তবে রাস্তায় যানবাহন তল্লাশির নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। ফলে যানজট আরও বাড়ছে বলেও দাবি তাদের।
Leave a Reply